চান্দিনায় বিলুপ্তির পথে পরিবেশ উপযোগী গরুর হালচাষ
||আলিফ মাহমুদ কায়সার||
কৃষি প্রধান বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লাঙ্গল-জোয়াল। চিরায়ত বাংলার রূপের সন্ধান করতে গেলে এই দুই কৃষি উপকরণের কথা যেমন অবশ্যই আসবে, তেমনই আসবে হালের গরুর কথাও।
প্রায় বিলুপ্তির পথে পরিবেশ বান্ধব ও পরিবেশের অন্যতম উপযোগী গরুর হালচাষ। এক সময়ে কৃষকদের জমি চাষে একমাত্র নির্ভরশীল ছিল গরুর হাল চাষ কিন্তু তা এখন বিলুপ্তির পথে বললেই চলে।
এক সময় গ্রামাঞ্চলেরররররর প্রতিটি বাড়িতে হাল চাষের জন্য একাধিক জোড়া হালের বলদ,লাঙ্গল,জোয়াল ও মইসহ হালচাষের বিভিন্ন সরঞ্জামে মানানসই ছিল বাড়ির পরিবেশ। যার বাড়িতে যত বেশি ঐসব সরঞ্জাম থাকতো,এলাকা জুড়ে তার পরিচিতি থাকতো তত বেশি। এতে করে শোভা পেত তার বাড়ির গোয়ালঘর ও বৈঠকখানা। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই বৈঠকখানাও আর নেই।নেই হালের বলদ,লাঙ্গল,জোয়াল।
সবকিছুই এখন বিলুপ্তি হতে চলেছে। সময় ও অর্থের সাশ্রয় এবং ঝামেলামুক্ত থাকতেই লোকজন এখন গরুর হালের পরিবর্তে মাঠে মাঠে নামিয়েছে পাওয়ার ট্রিলারের যান্ত্রিক হালচাষ। গরুর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি,কামলাদের চাহিদা বেড়ে যাওয়া,গৃহস্থরা আর চায় না অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে। সময় ও অর্থ বাঁচাতে কৃষকদের প্রায় বাড়িতে হয়েছে পাওয়ার ট্রিলার।
তবে,গরু দিয়ে হালচাষের প্রথা বিলুপ্ত হতে চললেও এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন, চান্দিনার আটচাইল গ্রামের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম।কষ্টসাধ্য হলেও প্রতি মৌসুমে চাষের জন্য আমার দুইজোড়া হালের গরুর প্রয়োজন পড়ে গৃহস্থের।সময় বেশী হলেও পরিবেশবান্ধব হালের গরু আর কয়েক বছর পর আর দেখা যাবেনা বলে জানান তিনি।
এই বয়সেও চান্দিনার জমিতে হালচাষ দিয়ে ফসল ফলাচ্ছেন, তিনি নিজের গরু, লাঙ্গল দিয়ে জমিতে চাষ দিচ্ছেন ফসল করার জন্য। এছাড়া আগের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য তিনি এখনো বর্তমানে গরু দিয়ে হাল চাষ দিয়ে থাকেন বলে জানান চান্দিনার কচুয়ার পাড় মুন্সী বাড়ির তাহের মুন্সী।
খোজনিয়ে দেখা গেল ৭৮ বর্গমাইল চান্দিনায় ১০-১২ টি হালের গরু ছাড়া প্রত্যন্ত গ্রামীন অবকাঠামোতে সকালবেলা কাঁধে লাঙল-জোয়াল আর জোড়া গরুর দড়ি হাতে নিয়ে মাঠে যেতে দেখা যায় না কৃষকদের। অনেকাংশে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য লাঙল দিয়ে হালচাষ।
অনেকে জানান, আধুনিক কালের আবর্তনে গ্রাম বাংলার হতে হারিয়ে গেছে সেই পুরনো দিনের গুরুত্বপূর্ণ গরুর হাল ও গাভী পালন। গরুর হাল লাঙল আর পোষা গাভী আর কিছুদিন পরে নতুন প্রজন্ম হয়ত গরুর হাল কি জিনিস তা বুঝানো মুশকিল হয়ে পড়বে। এ থেকে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গরুর হাল ও গরুর গাড়ী সংরক্ষণসহ গাভী পালনের সকলের সু দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন বলে তারা মন্তব্য করেছেন।